মধুপুর শালবনের দোখলা রেঞ্জের দোখলা বিটে গত ১৭ জানুয়ারি বনভূমির বড় একটি জায়গা চাষ করা হচ্ছিল ট্রাক্টর দিয়ে। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিদেশি প্রজাতির একাশিয়া গাছ কেটে ওই বনভূমি দ্রুত চাষ করা হচ্ছিল। মাসখানেক আগেও এখানে ছিল কৃত্রিম বন। আবর্তকাল শেষে নিলামে সেসব গাছ বিক্রি করা হয়। পাশেই আনারসের বিশাল নতুন বাগান। মাস ছয়েক আগে সেখানেও একাশিয়ার বনবাগান ছিল। আশেপাশে তখনো গাছ কাটা হচ্ছিল।
যেখানে সামাজিক বনায়নে কৃত্রিম বাগান করা হয়েছে সেখানে একসময় শালবন ছিল। যারা সামাজিক বনায়নের অংশীদার তারা বিক্রমূল্যের ৪৫ শতাংশ পাবে এবং সামাজিক বনায়নের চুক্তি অনুসরণ করে তারা তাদের প্লটে আনারসসহ অন্যান্য ফসল চাষ করতে পারবে। কিন্তু বনভূমিতে লাঙ্গল দিয়ে চাষ করার অনুমতি নেই।
মধুপুর শালবন এবং অন্যান্য জায়গার বনভূমিতে সামাজিক বনায়ন অত্যন্ত বিতর্কিত একটি বিষয়। বিদেশি প্রজাতির গাছ দিয়ে এ ধরনের সামাজিক বনায়নের শুরু ১৯৮৯-১৯৯০ সালে। সামাজিক বনায়নের প্রথম প্রকল্প থানা বনায়ন ও নার্সারি উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সামাজিক বনায়ন করতে গিয়ে নির্বিচারে কাটা হয়েছে শালকপিস ও অন্যান্য দেশি প্রজাতির বৃক্ষ। প্রথম আবর্তে ব্যাপকভাবে ইউক্যালিপটাস লাগানো হয়েছিল। ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে এডিবির ঋণের টাকায় মধুপুরে দ্বিতীয় সামাজিক বনায়ন প্রকল্প ছিল ফরেস্ট্রি সেক্টর প্রজেক্ট। প্রাকৃতিক বন কেটে সামাজিক বনায়ন দৃশ্যত মনোকালচার যা ১০ বছরের মাথায় কেটে ফেলা হয়। বনভূমিতে এমন বনায়ন বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমের ব্যাপকে ক্ষতি করে। সামাজিক বনায়নের দ্বিতীয় আবর্ত থেকে সরকারি বনভূমিতে ইউক্যালিপটাস লাগানো বন্ধ হয়।
তবে বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের চরম ক্ষতি করে সামাজিক বনায়ন চলছে। এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এডিএফ) থেকে সহজশর্তে পাওয়া ঋণের টাকায় করা সামাজিক বনায়নের ফলে পরিবর্তন হয়েছে নাটকীয় এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর। চাক্ষুষ পরিবর্তন হলো মধুপুরে হাজার পাঁচেক একর জমিতে প্রাকৃতিক বনের জায়গায় তৈরি হয়েছে মূলত একাশিয়ায় কৃত্রিম বাগান। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গোটা এলাকায়। বন বিভাগের হিসাবে ১৯৮১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ২৮৩.০৩ হেক্টর জমিতে ব্লক বা উডলট (জ্বালানি কাঠের বন) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ধরনের বনায়ন পরিবেশের বড় ক্ষতি করছে, যার প্রভাব বছরের পর বছর বাড়ছে। মধুপুর শালবনের বিরাট অংশ আজ আনারস, কলা, পেঁপে, লেবু, হলুদ ও মশলার বাগান। এসব জায়গায় একসময় প্রাকৃত্রিক শালবন ছিল এবং এখনো কাগজে-কলমে গেজেটভুক্ত বনভূমি।
সামাজিক বনায়ন স্থানীয় দরিদ্র মানুষের অংশগ্রহণে সরকারি বনভূমিতে বনায়ন ব্যবস্থাপনা। নির্বাচিত একজন অংশগ্রহণকারী তৃতীয় আবর্তকাল পর্যন্ত এক হেক্টর জমির প্লট পেয়েছেন। বনবিভাগের সূত্র মতে চতুর্থ আবর্তকাল থেকে সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারী বাড়াতে একটি প্লটের আয়তন এক একরে নামিয়ে আনা হচ্ছে। সরকারি বনভূমিতে এ মডেল সহ-ব্যবস্থাপনা হিসাবে পরিচিত। এ বনায়ন মডেল ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক বন নষ্ট করেছে। মধুপুর ও অন্যান্য জায়গায় এডিবি সামাজিক বনায়নের দুই আবর্তে ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এরপর বাংলাদেশসহ এশিয়ার সমস্ত দেশে বনখাতে বিনিয়োগ বন্ধ করেছে। কৃত্রিম সামাজিক বনায়নের ক্ষতি বুঝতে পেরে এডিবি বনখাতে বিনিয়োগ বন্ধ করেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার কাছে স্বীকার করেছেন।
সামাজিক বনায়নের এই সহ-ব্যবস্থাপনা মডেলে অংশগ্রহণকারী বা সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত আছে। যেমন, তারা হবেন বনাঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষ, সুবিধাবঞ্চিত বা অনগ্রসর সম্প্রদায়ের সদস্য, দুঃস্থ নারী, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের বংশধর এবং ভূমিহীন বা ৫০ শতকের কম জমির মালিক। অংশগ্রহণকারী হিসেবে অগ্রাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো যে তাকে অবশ্যই বনায়ন এলাকার এক কিলোমিটার মধ্যে বসবাস করতে হবে। যদি এই দূরত্বের মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক সুবিধাভোগী পাওয়া না যায়, তবে এক কিলোমিটারের বাইরে কিন্তু বনায়ন এলাকা থেকে খুব বেশি দূরে নয়, এমন এলাকা থেকেও সুবিধাভোগী নির্বাচন করা যেতে পারে।
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সামাজিক বনায়ন বাস্তবায়নকারী সংস্থা, বাংলাদেশ বন বিভাগ, অংশগ্রহণকারী নির্বাচনের এ শর্তগুলো মানছে কি? স্থানীয়রা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শর্ত মানা হচ্ছে না। জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ (জাউপ)-এর সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, ‘অনেক অংশগ্রহণকারী সত্যিকার অর্থে দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত এবং ভূমিহীন নয়। তারা বেশ সচ্ছল।’ তবে তিনি এরকম কোনো নির্দিষ্ট অংশগ্রহণকারীর নাম প্রকাশ করতে চাননি।
সামাজিক বনায়নের ইতিবাচক দিকও আছে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল সবুজায়নের ক্ষেত্রে। কিন্তু ১৯৮৯-১৯৯০ সালে মধুপুর এবং অন্যান্য বনাঞ্চলে এর শুরুটা ছিল খুব বেদনাদায়ক। ক্ষয়িষ্ণু ও বৃক্ষহীন এলাকায় বনায়নের কথা থাকলেও ঘন ও পাতলা উভয় ধরনের প্রাকৃতিক বনের গাছ কেটে সেখানে ইউক্যালিপটাস এবং একাশিয়া লাগানো হয়।
সামাজিক বনায়নের প্রথম আবর্তকালে ৭-১০ বছরে প্রকল্পের গাছ কাটার কথা থাকলেও সময়ের আগেই বেশিরভাগ গাছ কাটা পড়ে। এটা ছিল অদূরদর্শী পরিকল্পনার এক নজীরবিহীন উদাহরণ। হাজার বছর ধরে টিকে থাকা বন এভাবেই প্রতিস্থাপিত হয় বিদেশি প্রজাতির গাছ দিয়ে। এমন প্রাকৃতিক আচ্ছাদন ধ্বংসের সুদূরপ্রসারী পরিণতি এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।
স্থানীয় সচ্ছল ব্যক্তিদের কেন সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারী হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের পক্ষে সাফাই বক্তব্য দেন মধুপুর রেঞ্জের একজন অংশগ্রহণকারী এবং অবস্থাসম্পন্ন ব্যবসায়ী। ‘প্রথম আবর্তের গাছ বন চোরদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি তখনকার দরিদ্র অংশগ্রহণকারীরা। তাই দ্বিতীয় আবর্তকাল থেকে আমাদের মতো সক্ষম ও সাহসী অনেককে সুবিধাভোগী হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে এবং তখন থেকেই আমরা বন বাগান রক্ষা করে আসছি।’
সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারী বাছাইয়ে ঘুষ লেনদেনসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেন।
সামাজিক বনায়নের একটি বিশেষ দিক হলো অর্থনৈতিক লাভ। মধুপুর রেঞ্জের একজন বিধবা সুবিধাভোগী, যিনি এক হেক্টর প্লটের অংশগ্রহণকারী, এই বছর গাছ কাটার সময় ভীষণ খুশি। তার প্লট ১১ লাখ ২২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে যার থেকে তিনি পাবেন ৪৫ শতাংশ, বন বিভাগ ৪৫ শতাংশ এবং বাকি ১০ শতাংশ যাবে পরবর্তী আবর্তে গাছ লাগানোর জন্য বৃক্ষরোপণ তহবিলে।
সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে শত শত অংশগ্রহণকারী রয়েছেন যারা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল এবং গাছ বিক্রয় থেকে একটি ভালো অঙ্কের টাকা পান। সামাজিক বনায়ন শুরুর বছরগুলোতে অনেক ব্যবসায়ী আনারস এবং মশলা চাষের জন্য অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্লট ভাড়া নেন। অংশগ্রহণকারীরা ব্যবসায়ীদের ফসল চাষ করতে দিয়ে কিছু আয় করলেও ব্যবসায়ীরাদে পকেটেই বেশি ভারি হয়।
মধুপুরে সামাজিক বনায়নের সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, ১৯৮০-র দশকেও যেসব জায়গায় প্রাকৃতিক বন ছিল, সেখানে আজ অর্থকরী ফসলের আবাদ হচ্ছে এবং এর থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও প্রভাবশালীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। মধুপুর এবং অন্যান্য জায়গায় সামাজিক বনায়নের ফলে সবচেয়ে ভয়াবহ যে ক্ষতি হয়েছে তা হল বাস্তুতন্ত্রের (ইকোসিস্টেম) সামগ্রিক বিনাশ।
কৃত্রিম বনায়ন কীভাবে মধুপুর এবং অন্যান্য অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের (ইকোসিস্টেম) বিনাশ ঘটিয়েছে তা যে বন বিভাগ এবং প্রধান অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান (এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক) জানে না এমন নয় এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনাও রয়েছে। আমি উপরে যেমনটি উল্লেখ করেছি এডিবি তার বিনিয়োগ কৌশল বনাঞ্চলে বাস্তুতন্ত্রের (ইকোসিস্টেম) যে মারাত্মক ক্ষতি করেছে তা বুঝতে পেরে বাংলাদেশসহ পুরো এশিয়ায় বনখাতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকও মাঝে বনখাতে বিনিয়োগ একেবারে কমিয়ে দিয়েছিল। তবে বনখাতে এ যাবৎকালের সম্ভবত সবচাইতে বড় প্রকল্প, টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’র মাধ্যমে ২৮ জেলার ৭৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর বনভূমিতে ৪০ হাজার বননির্ভর উপকারভোগী সঙ্গে নিয়ে বন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য স্থির করেছে। বননির্ভর উপকারভোগীদেরকে বনের জন্য হুমকি বিবেচনা করা হয়।
সামাজিক বনায়নে যে সহ-ব্যবস্থাপনা, বিশ্বব্যাংকের সুফল প্রকল্পে তার কিছু পরিবর্তন করে বলা হচ্ছে কোলাবোরেটিভ (সহযোগী) বন ব্যবস্থাপনা (সিএফম) যার লক্ষ্য হলো বিলুপ্তির পথে থাকা বন পুনরুদ্ধার এবং বননির্ভর উপকারভোগীদের সাহায্য প্রদান। সুফল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বন অধিপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘সাইট স্পেসিফিক প্ল্যান (এসএসপি)-এর মাধ্যমে ৭৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমি আমরা পুনরুদ্ধারে সফল হচ্ছি।’
কিন্তু এ ব্যাপারে স্থানীয়রা ভিন্ন কথা বলছেন। গাছাবাড়ি গ্রামের প্রবীন গারো ব্যক্তি অজয় এ. মৃ বলেন, ‘সুফল প্রকল্পের কারণে বনের অনেক প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্ম কেটে সাফ করা হয়েছে। এতে বন্যপ্রাণী ও পোকামাকড়ও হুমকির মুখে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বড় গাছের ছায়ায় থাকা ছোট গাছের বাঁচার সম্ভাবনা কম। অবশিষ্ট প্রাকৃতিক বন যেমন আছে, তেমনই রাখা উচিত।’
মধুপুর ন্যাশনাল পার্কসহ অন্যান্য সংরক্ষিত বনভূমিতে সুফল প্রকল্পের অনেক রঙিন সাইনবোর্ড দেখা যায় যেখানে সাইট স্পেসিফিক প্লান-এর বিবরণ ও লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক গাছ পুনরুদ্ধারের বিশেষ কোনো নজির চোখে পড়ে না। এ প্রকল্পের কিছু প্লটে আনারসেরও চাষ হচ্ছে।
২০২২ এবং ২০২৩ সালে সামাজিক বনায়নের যেসব প্লটে গাছ কাটা হয়েছে তার অধিকাংশ জায়গায় এখন আনারসের বাগান। গাছা কাটার পর পরই এসব প্লটে খুব দ্রুত মোথা তুলে ফেলা হয় এবং ট্রাক্টর দিয়ে দ্রুত আনারস লাগানোর জন্য তৈরি করে ফেলা হয়। এমন কাজ কাদের পক্ষে করা সম্ভব? স্থানীয়রা বলছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি যারা সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্লট ভাড়া নিয়েছে তারা এটা করেন। সুফল প্রকল্প এবং এর উপকারভোগীরা বনভূমিতে এ ধরনের চাষাবাদ বন্ধে কি কিছু করতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয়রা বলেন, খুব সামান্য অথবা কিছুই না।
বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও একই কথা বলেন। অর্থকরী ফসল, যেমন: আনারস, কলা, পেঁপে এবং মশলা চাষের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন সবচেয়ে বড় সমস্যা, নিজের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে এমন মত ব্যক্ত করেন প্রাক্তন প্রধান বন সংরক্ষক। রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই বন ধংসের হোতা।
সুফল প্রকল্প নিয়োজিত একজন উচ্চপদস্থ বন কর্মকর্তারও একই মত। তার মতে, কেবল সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই বন রক্ষা করতে পারে।
তবে বিশ্বব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সুফল নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করলেও বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তেমন সন্তুষ্ট নন। তার মতে, বন বিভাগের উচিত বিশ্বব্যাংক ও এর নীতির প্রতি আরও মনযোগী হওয়া।
যেসব কারণে মধুপুর শালবন এবং অন্যান্য জায়গায় আমরা নজীরবিহীন বনবিনাশ দেখছি তা নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে কোনো লাভ হচ্ছে না। রাজনৈতিক সরকার, বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে তাদেরকে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে এবং অবস্থা যাতে আরও খারাপের দিকে না যায় তার জন্য অঙ্গীকার করেতে হবে এবং জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে। বন বিভাগ এবং রাজনৈতিক হোমরাচোমরারা নিসন্দেহে সুফল-এর মাতো প্রকল্প থেকে লাভবান হন এবং এখন তারা বিশ্বব্যাংককে সরবে বনখাতে ফিরে আসতে সাহায্য করছে। তাদের যে বিষয়টি স্মরণে রাখতে হবে তা হলো বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে বনসম্পদ আহরণ এবং সাম্প্রতি বনায়নে সহ-ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের (ইকোসিস্টেম) ওপর ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে আরও মনযোগী ও অনুরাগী দৃষ্টিভঙ্গির দরকার যা বাস্তবে আমরা দেখছি না।
ফিলিপ গাইন: গবেষক এবং সোসাইটি ফর এনভাইরনমেন্ট এন্ড হিউমেন ডেভেলপমেন্ট (সেড)-এর পরিচালক। ফাহমিদা আফরোজ নাদিয়া, সেড গবেষক এবং মধুপুর থেকে প্রবীন চিসিম সামাজিক বনায়নের ওপর তথ্য সংগ্রহে লেখকে সাহায্য করেছেন।
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)